ওয়েব ডেভলপমেন্ট কি?
ওয়েব ডেভলপমেন্ট হলো ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরির প্রক্রিয়া বা কোন ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক যেমন ইন্ট্রানেট হিসাবে পরিচিত।
ওয়েবসাইটের ডিজাইন কিন্তু এর কনসার্ন নয়, ওয়েবসাইট তৈরি এবং এর ফাংশনালিটি মেইন্টেইনের জন্য যে কোডিং, প্রোগ্রামিং এবং আনুষাঙ্গিক কাজ— এগুলোই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।
সবচেয়ে সরল স্ট্যাটিক ওয়েবপেজ থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম, টুইটার) প্লাটফর্ম বা অ্যাপ, ই-কমার্স (আলিবাব,ইভালি,দারাজ) ওয়েবসাইট কিংবা অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া— যত অনলাইন টুল আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করছি এই সবকিছু গড়ে তোলার কাজটাই হল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।
অনেক সময় আমরা ওয়েব ডিজাইনিং কে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের সাথে গুলিয়ে ফেলি। তবে এই দুইটি জিনিষের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য রয়েছে৷ প্রোগ্রামিং এবং কোডিং এর মাধ্যমে ওয়েব ডেভেলপাররা প্রতিনিয়ত একটি ওয়েবসাইটকে চালু করে রাখে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে কত প্রকারে ভাগ করা যায়?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর পরিধি ব্যাপক হওয়ায় এর কাজের মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে।
কাজের ধরন অনুযায়ী ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এগুলো হলোঃ
- ক্লায়েন্ট সাইড কোডিং (ফ্রন্ট এন্ড)
- সার্ভার-সাইড কোডিং (ব্যাক এন্ড)
চলুন এখন এগুলো সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ক্লায়েন্ট সাইড কোডিং (ফ্রন্ট এন্ড) কি?
ক্লায়েন্ট সাইড স্ক্রিপ্টিং বলতে মূলত ওয়েবসাইটের ইউজারদের প্রান্তকেই নির্দেশ করে। একে অনেক সময় ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্টও বলা হয়ে থাকে। ক্লায়েন্ট সাইড বা ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেসব বিষয়কে নির্দেশ করে যেগুলোতে আমরা ব্যবহারকারীরা সরাসরি সম্পৃক্ত।
ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের ফ্রন্ট-এন্ডের কোড করেন। অর্থাৎ তারা ব্যাক-এন্ডের ডেটাকে ব্যবহারকারীদের জন্য সহজে বোধগম্য, দৃষ্টিনন্দন এবং ফাংশনাল করে গড়ে তোলেন। তারা ওয়েব ডিজাইনারদের দেওয়া ডিজাইনকে এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস (CSS) বা জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript)-এর মাধ্যমে বাস্তব রূপ দেন।
ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার ওয়েবসাইটগুলো এমনভাবে কোড করেন যাতে বিভিন্ন স্ক্রিন সাইজ এবং ডিভাইসের ধরণের সাথে সেগুলো এডাপ্টেবল হয় ( Mobile Friendly) , ফলে ইউজাররাও সবখানে সন্তোষজনক এক্সপেরিয়েন্স পান।
ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপাররা একটি ওয়েবসাইটের লে-আউট, তার ইন্টারেক্টিভ এবং নেভিগেশনাল এলিমেন্ট যেমন বাটনস, স্ক্রলবার, ইমেজ, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন লিংক— এসবকিছু মিলেয়ে একটি ওয়েবসাইটে বাস্তবায়িত করেন।
সার্ভার-সাইড কোডিং (ব্যাক এন্ড) কি?
আপনি শুটিং দেখেছেন কখনো? আমরা কিন্তু শুধু সিনেমায় কি দেখাচ্ছে ওটাই দেখি বিহাইন্ড হ্যা দিনে কি হইছেছিল দেটা কিন্তু দেখতে পাইনা।
তেমন ভাবে যেকোনো ওয়েবসাইটের ভেতরে বা বিহাইন্ড দ্য সিনে যা চলে সেটিকে বলা হয় সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং। সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিংকে অনেক সময় ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্টও বলা হয়ে থাকে।
এই ব্যাক এন্ড একটি ওয়েবসাইটের অপরিহার্য অংশ কিন্তু যেটি ওয়েবসাইটের ব্যাবহারকারি বা ইউজাররা তা দেখতে পায়না।
ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার ফ্রন্ট-এন্ডকে সচল রাখার জন্য যে ইনফাস্ট্রাকচার দরকার তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
এর মূলত তিনটি অংশ বলা যায়— সার্ভার, অ্যাপ্লিকেশন, ডেটাবেজ।
ওয়েবসাইটের ভেতরের ডেটা ও তথ্যসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং গোছানো রাখে এবং ক্লায়েন্ট বা ইউজারদের সাইডে সবকিছু সাবলীলভাবে চালানো এর পূর্ন দায়িত্ব থাকে সার্ভার সাইডের উপর।
সাধারণত ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট টাস্কে থাকে ডেটাবেজ তৈরি, ইন্টিগ্রেট ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, ব্যাক-এন্ড ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে সার্ভার-সাইড সফটওয়্যার তৈরি, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি ও ইমপ্লিমেন্ট, ওয়েব সার্ভার টেকনোলজি আর অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যথাযথভাবে কাজ করা।
আমরা যখন ওয়েব ব্রাউজারে কোনো ফরমে তথ্য দেই, সেটি তৎক্ষনাৎ সার্ভার সাইডের প্রান্তে চলে যায়। সার্ভার সাইড সেটিকে যাচাই করে আবার ক্লায়েন্ট সাইডে পাঠিয়ে দেয়। মূলত এভাবেই একটি ওয়েবসাইট কাজ করে থাকে।
কিভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখবো?
অনেকেই ভাবতে পারেন ওয়েব ডেভেলপার হতে বোধহয় একাডেমিক ডিগ্রির প্রয়োজন, তবে প্রকৃতপক্ষে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষতার এবং নিজের ইচ্ছাশক্তি।সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনি শিখতে পারেন অনলাইনেই।
তবে অনলাইনের মাধ্যমে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার ক্ষেত্রেই আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার আগে প্রয়োজনীয় সবকিছু তো ইতোমধ্যে জেনেই গেছেন।
এখন ইচ্ছা করলে নিজেও Codeacademy এবং w3schools এর মতো কিছু ওয়েবসাউটের মাধ্যমে বিনামূল্যেও এইচটিএমএল, সিএসএস এবং জাভাস্ক্রিপ্ট টিউটোরিয়াল গুলো শিখে নিতে পারবেন ।
তাছাড়া আপনারা যারা যারা অনলাইনে এইচটিএমএল, সিএসএস এবং PHP শেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এর সাথে যাদের ক্ষেত্রে ওয়েব প্রোগ্রামিং শেখার খুব আগ্রহ আছে, বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখা শুরু করতে চাইছেন তাঁরা সংগ্রহে রাখতে পারেন নিচের ওয়েবসাইটগুলোকে লক্ষ্য রাখতে পারেন।
এছাড়াও আপনি অনলাইনের বিভিন্ন রিসোর্স থেকেও শিখতে পারেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনলাইনের এত এত রিসোর্স আপনাকে দিশেহারা করে দিতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি গাইডেড এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে যেখানে বিভ্রান্তি ছাড়াই আপনি পুরোদস্তর ওয়েব ডেভেলপার হয়ে উঠতে পারেন।
ইন্টারনেটে কন্টেন্ট খোঁজার ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য সবচেয়ে বড় পরামর্শ হচ্ছে সার্চ করতে শিখুন। আপনি ইন্টারনেটে যেকোন তথ্য যত দক্ষতার সাথে, যত দ্রুত খুঁজে বের করতে পারবেন।
আপনার শেখার সুযোগটাও তত বিস্তৃত হবে। বিনামূল্যে কোনো কিছু শেখার জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই!
সার্চ করা শিখলে সহজেই আপনি যা শিখতে চান বা জানতে চান ইন্টারনেটে সার্চ করলে হাজার হাজার রিসোর্স পেয়ে যাবেন।
সুতরাং, যারা ওয়েব ডেভেলপার হতে চান বা ওয়েব ডেভেলপিং শুরু করতে চান তাদের এ সম্পর্কিত সকল পড়াশোনার জন্য ইন্টারনেটে রিসোর্স খুঁজে পাবেন।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর ভবিষ্যত কি?
ইন্টারনেট এর জগতের শুরু বা শেষ বলতে আসলে কিছু নেই,এর পরিধি অনুমানের বাহিরে। ওয়েবসাইটও এমন একটি জায়গা যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। সুতরাং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর কাজের ক্ষেত্রেও তাই সম্ভাবনাও অনেক বেশি!
আপনি যদি একটি টিমের সাথে একটু কম স্বাধীনতাতেও কাজ করতে স্বচ্ছন্দ হন এবং স্ট্যাবল ইনকাম সোর্স পছন্দ করেন, কোনো ফার্মে ফুল-টাইম পজিশন নিলে আপনার জন্য তা সুবিধাজনক হবে।
অনলাইনে একটু খুঁজলেই দেখবেন অনেক কোম্পানি খুঁজছে ফুল-টাইম ওয়েব ডেভেলপার। আর স্বাধীনতা চাইলে এবং নিজের সাফল্য সম্পূর্ণই নিজের করে নিতে চাইলে ফ্রি-ল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতে পারেন। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার প্রয়োজন হয়।
কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের পর অনেকে কনসাল্টেন্ট হিসেবেও কাজ করতে পারেন। সময়ের সাথে স্কিল বাড়াতে থাকলে আপনার ডিমান্ড কখনোই শূন্য হবে না।
সারাবিশ্বেই বর্তমানে বিভিন্ন জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, ফাইভার ইত্যাদি অন্যতম। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ওডেস্কে প্রায় সবসময়ই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে হাজার হাজার ধরনের কাজ থাকে।
ফ্রিল্যান্সারে রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি ওপেন জব। এদের প্রজেক্টে ঘন্টা প্রতি গড় রেট ২৫ ডলার থেকে শুরু করে ১৫০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। উত্তরোত্তর এই রেট শুধু বাড়ছেই। কাজের প্রবৃদ্ধি দেখলেই বুঝা যায় কাজের চাহিদা কত বেশি বাড়ছে। আশা করি বুঝতেই পারছেন, ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে!
শেষ কথাঃ
আপনি হয়তো জানেন,ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডিমান্ডিং পেশাগুলোর মধ্যে একটি৷ এই লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকলে আপনি ইতোমধ্যেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর সব কিছুই হয়তো জেনে গেছেন।